বাংলাদেশে প্রথম উৎপাদিত হলো কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমডিসিভির

0
638

 

কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমডিসিভির উৎপাদন করেছে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল। তারা এর নাম দিয়েছে ‘রেমিভির’। এখন প্রস্তুতি চলছে বাজারজাত করার। এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিশ্বে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধ বলে স্বীকৃত জেনেরিক রেমডিসিভির উৎপাদনের সব ধাপ তারা সম্পন্ন করেছেন।

এসকেএফের পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) ড. মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ওষুধটি উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া শেষে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

 

বেক্সিমকো, ইনসেপ্টাসহ আরও কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল রেমডিসিভির উৎপাদন করছে। এসব কোম্পানির উৎপাদিত রেমডিসিভিরও দ্রুত বাজারে চলে আসবে বলে জানা গেছে।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি এই ওষুধ সারাবিশ্বে সাড়া ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত সপ্তাহে করোনার ওষুধ হিসেবে রেমডিসিভিরকে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

জাপানের ওষুধ প্রশাসন ৭ মে থেকে ওষুধটি করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ জাপান এর উৎপাদনে যাবে তা এখনও ঠিক হয়নি বলে সে দেশের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

এসকেএফ দাবি করেছে, তারাই বিশ্বে প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা জেনেরিক (মূল/গোত্র) রেমডিসিভির উৎপাদন করতে সক্ষম হলো। এসকেএফের উৎপাদন করা রেমডিসিভিরের বাণিজ্যিক নাম ‘রেমিভির’।

 

সিমিন হোসেন বলেন, ওষুধ প্রশাসন গত মার্চ মাসে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনের পরপরই তাদের ফর্মুলেশন বিজ্ঞানীরা মার্চের মাঝামাঝি থেকে রেমডিসিভির নিয়ে কাজ শুরু করেন। যেহেতু এটি একটি শিরায় দেওয়া ইনজেকশন, সে কারণে এর উৎপাদনে সূক্ষ্ণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। দুই মাস ধরে এসকেএফ কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই এত কম সময়ে এটা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ওষুধের মূল উপাদান সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে পর্যাপ্ত কাঁচামাল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসি হোয়াইট হাউসে এক আলোচনায় বলেন, করোনা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে রেমডিসিভিরের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই ওষুধ যেহেতু কাজ করছে বলে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে, তখন তা দ্রুত মানুষকে জানানো নৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে।

গিলিয়েডের নিজস্ব পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ওষুধ ব্যবহারে রোগীদের অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। মানুষের শিরায় ইনজেকশন হিসেবে এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। রোগের তীব্রতার ওপর এর ডোজ নির্ভর করে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ৫ অথবা ১০ দিনের ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।

 

এসকেএফ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রেমডিসিভির উৎপাদনের একচেটিয়া স্বত্ব রয়েছে গিলিয়েডের। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুযায়ী জাতিসংঘ স্বীকৃত বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো এসব পেটেন্ট বা স্বত্ব অগ্রাহ্য করতে পারে। ফলে এসব দেশ সহনীয় মূল্যে ওষুধ উৎপাদন করতে পারে। তবে এই ওষুধটি বর্তমানে খোলাবাজারে দেওয়া হবে না। এটা দেওয়া হবে করোনা চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমোদিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকে।

শিল্পপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস দেশের বাইরে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের ৩০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here