করদাতার সংখ্যা এক কোটি করার টার্গেটঃ টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দিতে হবে

0
626

 

অর্থবছর ২০২০-২১ এর জাতীয় বাজেটে আয়করে আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগামী এক বছরে করদাতার সংখ্যা কমপক্ষে এক কোটি করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বর্তমানে করদাতার তালিকায় আছেন পঞ্চাশ লাখ। টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) থাকলেই আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বর্তমানে শুধু কর দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে এমন করদাতা বা টিআইএন-ধারীদের বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে যাদের টিআইএন আছে তাদের সবাইকে রিটার্ন জমা দিতে হবে। অর্থাৎ রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া শেয়ার বাজারে বন্ড কেনাবেচায় কমিশনের ওপর নতুন করে করারোপ ও কোম্পানির খরচের ক্ষেত্রে কর রেয়াত সুবিধা কমানোর প্রস্তাব করা হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পঞ্চাশ লাখ লোকের টিআইএন থাকলেও বার্ষিক রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ২২ লাখ। আগামীতে রিটার্ন সংখ্যা বাড়াতে চায় এনবিআর। সে জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সকল টিআইএন-ধারীকে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

সূত্র বলেছে, সরকার চায় করহার কমিয়ে বেশি লোককে আওতায় আনতে। এ জন্য এবারের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি ও কোম্পানি উভয় ক্ষেত্রে করহার কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে করসীমায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বাজেট -পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় করহার বেশি। যে কারণে কর ফাঁকির প্রবণতাও বেশি। ফলে কর প্রদানে উৎসাহিত হচ্ছেন না সামর্থ্যবানরা। আমরা পর্যায়ক্রমে করহার কমিয়ে আওতা বাড়াব। এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, আগামীতে যারা রিটার্ন জমা দেবে না, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সন্দেহভাজনদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তল্লাশি করা হবে। জনসংখ্যা অনুপাতে দেশে ব্যক্তিকরদাতার সংখ্যা খুবই কম। সামর্থ্যবানদের বড় একটি অংশ এখনও করের আওতার বাইরে।

 

বন্ডের কমিশনে কর : এখন শেয়ারবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেটে ব্রোকারেজ হাউসে প্রতি শেয়ার লেনদেন করলে যে কমিশন নেওয়া হয় তার ওপর শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কর আদায় করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে আগের নিয়ম অপরিবর্তিত রেখে নতুন করে বন্ডের লেনদেনও করের আওতায় আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন করলে কমিশনের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। বর্তমানে পাঁচ, দশ ও বিশ বছর মেয়াদি বিভিন্ন বন্ড আছে বাজারে। সাধারণ বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ড কিনে থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ড ক্রয়ের সময় অগ্রিম কর এবং লেনদেন মূল্যের ওপর উৎসে কর দেয়। এবারের বাজেটে আগের বিধান বাতিল করে বন্ড কেনাবেচা করে যে কমিশন পাবে তার বিপরীতে ১০ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, এর ফলে পুঁজিবাজারে বন্ডের লেনদেন বাড়বে এবং দেশের বন্ড মার্কেট বিকশিত হবে।

 

কোম্পানির ওপর করের চাপ বাড়বে : ব্যবসাকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন সময় বাজেটে নানাভাবে করছাড় ও প্রণোদনা দেওয়া হয়। সুবিধা দেওয়া হয় এই কারণে যে, প্রতিষ্ঠান যাতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে এবং মুনাফা করতে পারে। বর্তমান আইনে ‘প্রমোশনাল এক্সপেন্স’ খাতে কোম্পানির খরচের ক্ষেত্রে কর সুবিধা দেওয়া আছে। ধরা যাক, কোনো প্রতিষ্ঠান বছরে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন করল। তা থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে খরচ হিসেবে কর সুবিধা পায়। তার মানে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হিসেবে গণ্য হবে। এই খরচ কোম্পানির ব্যয়ের খাতে যোগ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের খরচ যত বেশি হবে তত কম কর দিতে হবে। নতুন বাজেটে খরচের সুযোগ কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা। অর্থাৎ, খরচের বেলায় আগে যে পরিমাণ কর সুবিধা পেত, বাজেটের প্রস্তাব কার্যকর হলে সেই সুবিধা আরও কমে যাবে। এতে করে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।

 

এনবিআর সূত্র বলেছে, ব্যবসাকে প্রমোট করার নামে বেশির ভাগ কোম্পানি খরচ বেশি দেখায়। এতে করে প্রতিবছর বড় অঙ্কের কর ফাঁকি হয়। ফাঁকি বন্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এনবিআরের সাবেক সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, করোনাকালে অনেক কোম্পানি মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ সময়ে এটা করা ঠিক হয়নি। কর সুবিধা সংকুচিত করার প্রস্তাব কার্যকর হলে অনেক বড় কোম্পানি চাপের মুখে পড়বে। ফলে কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here