জাপানি গাড়ির বড় বাজার বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশে গাড়ি তৈরির বড় কারখানাই করতে চাইছে দেশটি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সাথে সরকারি বাসভবনে গিয়ে তার সাথে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০) এ কথা বলেন। বাণিজ্যসচিব মো. জাফরউদ্দীন, অতিরিক্ত বাণিজ্যসচিব মো. ওবায়দুল আজম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশে অটোমোবাইল কারখানা স্থাপনের চিন্তা করছে তাঁর দেশ। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) জাপান বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে। এটি হবে এশিয়ায় তাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর চলমান বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য জাপানের প্রতি আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিনিয়োগে বাংলাদেশ আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধাসংবলিত প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরও বাংলাদেশকে দেওয়া বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত রাখার চিন্তা করছে জাপান। এ জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্পাদন এবং উভয় দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, জাপানে দক্ষ শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা আছে। বাংলাদেশ এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাপানে ১৩৬ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাপান থেকে ১৮৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ১২৯ কোটি ৪৯ ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
এর পূর্বে বিগত সোমবার (৩১ আগস্ট ২০২০) শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি শিল্পমন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে অবহিত করেন যে, রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড জাপানের মিতসুবিশি কর্পোরেশনের কারিগরি সহায়তায় মোটরগাড়ি উৎপাদন করবে। এটি হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোটরগাড়ি।
নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোটরগাড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যে খুব শিগগিরই অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি-২০২০ চূড়ান্ত করা হবে। এ নীতির আলোকে অটোমোবাইল শিল্পখাতে জাপানের কারিগরি সহায়তার সুযোগ উন্মুক্ত হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের শিল্পখাতে জাপানি বিনিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোটর গাড়ি উৎপাদন, জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়ন ও শিল্প ডাটাবেজ তৈরিতে জাপানের কারিগরি সহায়তা, মোটরসাইকেল শিল্পের আধুনিকায়ন, বাংলাদেশে অটোমোবাইল ও হালকা প্রকৌশল শিল্প সংশ্লিষ্ট ভেন্ডর ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন, মোটরসাইকেলের সার্টিফিকেশনের জন্য অটোমোবাইল টেস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট স্থাপন এবং শিল্প বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে কারিগরি সহযোগিতাসহ দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ও আলোচনায় স্থান পায়।
মাননীয় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নে জাপানের উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিআইসি’র সার কারখানাগুলোতে জাপান দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছে। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণেও জাপানের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর আধুনিকায়ন,কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপন, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা প্রকৌশল শিল্পের উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ভেন্ডার উন্নয়নে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে জাপানী রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ সময় রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-গৃহীত দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জাপানের মিটশুবিসি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য অটোমোবাইল শিল্প উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোটরগাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে জাপান কারিগরি সহযোগিতা দেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে মোটরসাইকেল শিল্পের বিকাশে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি-যৌক্তিক পরিমাণে নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের আধুনিকায়ন এবং চিনি শিল্পে পণ্য বৈচিত্রকরণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে বলেও তিনি জানান।
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে স্থাপিত জাপান ইকোনোমিক জোন গুণগতমানের দিক থেকে এশিয়ায় সর্ব শীর্ষে রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে দ্বি-পাক্ষিক সংলাপ জোরদার করতে হবে। এ সংলাপের মধ্যদিয়ে বিনিয়োগের জন্য উদীয়মান খাতগুলো চিহ্নিত হবে। এজন্য যৌথভাবে কাজও করতে হবে।
ইতো নাওকি শিল্পমন্ত্রীকে অবহিত করেন, মোটরসাইকেলের সার্টিফিকেশনের জন্য “অটোমোবাইল টেস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট” স্থাপনে জাপান প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।