ঢাকায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হিসাবে ৭ হাজার ২৫০ শয্যা প্রস্তুত থাকার কথা বলা হচ্ছে। আদতে এত শয্যাও নেই এবং কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর সব কয়টিতে রোগী ভর্তিও শুরু হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা অবশ্য বলেন, এখন ৫০ শয্যার বেশি যেকোনো হাসপাতালে, হোক সেটা সরকারি বা বেসরকারি পৃথক ব্যবস্থাপনায়, কোভিড-ননকোভিড দুই ধরনের রোগীই সেবা পাবেন।
তবে মাঠের চিত্র আলাদা। সরকারি সব হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দাবি তারা প্রস্তুত নয়।শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এনামুর রহমান বলেন, তাঁরা দিনকয়েক আগে চিঠি পেয়েছেন।
কোভিড রোগীদের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা শুরু করাটা সময় সাপেক্ষ। তাঁর হাসপাতালে শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর জন্য একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল। সেটিকেই হাসপাতালে রূপান্তরের চেষ্টা করছেন। তবে জুনের শেষ নাগাদ বা জুলাইয়ে গিয়ে হয়তো রোগী ভর্তি করা সম্ভব হবে। অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্যদিকে যেসব হাসপাতালে রোগীদের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা আছে, সেগুলোতে হাসপাতালের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়কেরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবিরে অস্থির। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন পরিচালক বলেন, ‘চাপে পড়ে যাঁদের প্রয়োজন নেই, তাঁদের ভর্তি করতে হচ্ছে। আর যে রোগীকে কোনোভাবেই ফিরিয়ে দেওয়া উচিত না, তাঁকে ফেরাতে হচ্ছে। এটা খুবই কষ্টকর।’
চিকিৎসকেরা রোগীদের শুধুমাত্র সংকটাপন্ন বোধ করলে হাসপাতালে আসার আহ্বান জানিয়েছেন । কথা বলে জানা গেছে, রোগীর চাপ বাড়ায় এখন রোগের তীব্রতা দেখে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যাঁদের বয়স বেশি, ডায়াবেটিস,হৃদরোগ, কিডনি–সংক্রান্ত জটিলতা আছে, তাঁরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। বয়স কম কিন্তু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, এমন রোগীদেরও ভর্তিও চেষ্টা করা হচ্ছে হাসপাতালগুলোয়।
তবে রোগী যে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত, সে সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণ হাসপাতালে ভর্তির সময় অবশ্যই দেখাতে হবে। নমুনা পরীক্ষার পর সরকারি কর্র্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া খুদে বার্তা বা ই-মেইল দেখিয়ে তবেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে।
এখন পর্যন্ত কোনো কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় রোগীদের কোনো টাকা পয়সা লাগছে না। এমনকি আনোয়ার খান মর্ডান ও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রোগীদের চিকিৎসা চলছে বিনা মূল্যে।
কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসা কোথায় কোথায় চলছে, সে তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে কোথায় যাবেন
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সুবিধা আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মহানগর হাসপাতাল,আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল ও সাজেদা ফাউন্ডেশেনে।
এর মধ্যে কোনো কোনোটিতে আবার ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা নেই। আসন থাকা সাপেক্ষে এই হাসপাতালগুলোয় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৯১০, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শয্যা সংখ্যা ৪৮, ডয়ালাইসিস মেশিন ৩০ টি।ঢাকা মেডিকেল কলেজ-২ (নতুন ভবন) বা বার্ন ইউনিটের নিচের জরুরি বিভাগে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ৫০০ শয্যার, আইসিইউ শয্যা ২৭, ডায়ালাইসিস মেশিন আছে ৩২টি।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫০, আইসিইউ শয্যা ২৬টি ও পাঁচটি ডায়ালাইসিস মেশিন।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০০, আইসিইউ শয্যা ১০ টি, ডায়ালাইসিস মেশিন ৩২ টি।
মহানগর জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ১৫০, আইসিইউ শয্যা ৫, ডায়ালাইসিস সুবিধা নেই।
আনোয়ার খান মর্ডার্ন হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২০০, দশটি আইসিইউ ও ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে। আইসোলেশন শয্যা আছে ৩০টি। উপসর্গ আছে কিন্তু শনাক্ত হননি, এমন রোগীরা এই আইসোলেশন সেন্টারে থাকতে পারেন।
হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৪০০, আইসিইউ শয্যা ১০টি, ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে।
রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ৫০ টি করে শয্যা আছে, প্রতিটিতে তিনটি করে আইসিইউ শয্যা আছে। তবে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা নেই।
মিরপুর লালকুঠি হাসপাতালে ২০০ শয্যা ও পাঁচটি আইসিইউ শয্যা আছে। এখানে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। আইসিইউ শিগগির চালু হবে।
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে সাজেদা ফাউন্ডেশনে ৫০ টি শয্যা আছে, আইসিইউ শয্যা আছে পাঁচটি। ডায়ালাইসিস মেশিন আছে ১টি । উপজেলা প্রশাসন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কোনো রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে প্রশাসন অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে কিংবা সাজেদা ফাউন্ডেশন নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে আসে।
মাঝারি উপসর্গের জন্য রেলওয়ে হাসপাতাল
যাঁদের শুধুমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার হলেই চলবে, তাঁদের জন্য ৪০ শয্যার রেলওয়ে হাসপাতাল আছে। এখানে আইসিইউ বা ডায়ালাইসিস সেবার ব্যবস্থা নেই।
প্রস্তুত থেকেও রোগী ভর্তি করছে না গ্যাস্ট্রোলিভার
মহাখালিতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫০, আইসিইউ শয্যা ২৬, ডায়ালাইসিস মেশিন দুটি। জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো রোগী ভর্তি শুরু হয়নি।
বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতাল চালু হচ্ছে
বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা দুই হাজার। তবে এই হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা ডায়ালাইসিস সেবার ব্যবস্থা নেই।হাসপাতালের পরিচালক তানভীর পলাশ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এখন হাসপাতালটিতে দুই শতাধিক র্যাব সদস্য চিকিৎসা নিচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এ সপ্তাহে অন্যদের ভর্তি করতে পারবেন।
শিগগির যুক্ত হতে পারে আরও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে। এ দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিগগিরই চিকিৎসা শুরু হতে পারে।
[…] করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে যা… COVID-19: 2,381 infected, 22 dead, and 816 recovered on 01 June 2020 in Bangladesh […]
Like!! Really appreciate you sharing this blog post. Really thank you! Keep writing.